সুলতান সুলাইমান মসজিদ কমপ্লেক্স

sultan-sulaiman-mosjid
Dec. 4, 2024

সুলতান সুলাইমান ড্রামা সিরিজের বদৌলতে সুলতান সুলাইমান হুররাম সুলতানা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে পরিচিত নাম। সত্যিকার অর্থেও উসমানী সালতানাত তার ইতিহাসের সর্বোচ্চ উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করে সুলতান সুলাইমানের সময়। সুলতানের ন্যায় বিচার দক্ষ শাসন ব্যবস্থার কারণে ইতিহাসে তিনি সুলাইমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট নামে পরিচিত। উল্লেখ্য সত্যিকারের ইতিহাসের সাথে সিরিয়ালের ঘটনার মিলের চেয়ে অমিলই বেশি

 

সুলতান সুলাইমানকে তুলনা করা যেতে পারে মোঘল সম্রাট শাহজাহানের সাথে। তাঁর সময় তিনি অনেকগুলো প্রকাণ্ড স্থাপনা তৈরী করে রেখে গেছেন যা কয়েক শতাব্দী পর এখনও মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

সুলতান সুলাইমানের তেমনি অবিস্মরণীয় অবদান হলো সুলতান সুলাইমান মসজিদ কমপ্লেক্স। আজকের দিনে কল্পনা করতেও কষ্ট হয় আধুনিক ক্রেন ছাড়া কিভাবে এতো বড় গম্বুজ মিনারের মসজিদ নির্মাণ করলেন। সুলতান সুলাইমানের সময় ওসমানী সালতানাতের প্রধান আর্কিটেক্ট ছিলেন মিমার সিনান। মিমার সিনানের মেধা সুলতান সুলাইমানের পরিকল্পনায় ওসমানীরা তৈরী করেছে অনেকগুলো কালজয়ী স্থাপনা। তেমনি মিমার সিনানের একটি মাস্টারপিস সুলতান সুলাইমান মসজিদ।

 

১৫৫০ সালে নির্মাণ শুরু হয় সুলাইমানিয়া মসজিদের। সাত বছর পর ১৫৫৭ সালে সুলতান সুলাইমান উদ্বোধন করেন এই মসজিদটি। অবাক করা তথ্য হলো সেই থেকে ৪৬২ বছর ধরে এই মসজিদটি ছিল ইস্তাম্বুলের সর্ববৃহৎ মসজিদ। সুলতান সুলাইমানের এই রেকর্ড ভাঙ্গে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী এরদোয়ান। এরদোয়ানের নির্মিত গ্রেট চামলিজা মসজিদ বর্তমানে ইস্তাম্বুল তথা তুরস্কের সবচেয়ে বড় মসজিদ।

 

সাত পাহাড়ের শহর ইস্তাম্বুলের তৃতীয় পাহাড়ের উপর অবস্থিত সুলাইমানিয়া মসজিদ। মসজিদের প্রশস্ত প্রাঙ্গন থেকে পুরো গোল্ডেন হর্ণের একটি প্যানোরোমিক ভিউ দেখা যায়। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি জ্ঞান কেন্দ্র গড়ে তুলা হয়েছিল। মসজিদের এক পাশে রয়েছে একটি মক্তব, তার সাথে মাদ্রাসা যেখানে সেটা হাদীস গবেষণাকেন্দ্র, পাশে একটি তিব্ব বা মেডিকেল কলেজ। মেডিকেল কলেজের সাথে দারুস শিফা বা ওসমানী হাসপাতাল। হাসপাতালের পাশে লাইব্রেরী, লাইব্রেরীর পাশে ইমারাত বা লঙ্গর খানা। এখান থেকে গরীব-দুখীদের বিনামূল্যে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হতো। এর পাশে রয়েছে সরাইখানা বা অতিথিশালা। সুলাইমানিয়া লাইব্রেরী আজ অবধি মুসলিম বিশ্বের ক্লাসিক্যাল বইয়ের একটি বিশাল সংগ্রহশালা। এরদোয়ানের পৃষ্ঠপোষকতায় বহু অর্থ ব্যয়ে সেই সব দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপিগুলোকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে আধুনিক প্রিন্ট ভার্সনও।

 

মসজিদের সামনে রয়েছে একটি কবরস্থান। এখানেই সমাহিত করা হয়েছে সুলতান সুলাইমান হুররাম সুলতানাকে। রয়েছে মহান স্থপতি মিমার সুলতানের কবর।

 

যে কোন অবকাশে পরিবারসহ ঘুরে আসতে পারেন সুলাইমানিয়া মসজিদ কমপ্লেক্স থেকে। প্রকাণ্ড এই মসজিদে দু রাকাত নামাজ আপনাকে দিবে অন্যরকম এক অনুভূতি। মসজিদের পাশে রয়েছে অনেকগুলো রুফটপ রেষ্টুরেন্ট। খোলা আকাশের নিচে তুর্কিশ নাস্তা খেতে খেতে গোল্ডেন হর্ণের অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। মসজিদের সামনে থেকে একটি রাস্তা ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে গেছে গোল্ডেন হর্ণ পর্যন্ত। পথের ধারে রয়েছে বাহারী দোকান পাট। পাহাড়ী পথে বেয়ে নিচে নামতে নামতে মনে হবে টাইম মেশিনের মতো সময়ের সিড়ি বেয়ে যেন অতীত থেকে আধুনিক যুগের দিকে রওনা হয়েছেন। পথের শেষে সামনে পড়বে গালাতা ব্রিজ, আধুনিক ট্রামওয়ে। জীবনের একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে সুলাইমানিয়া মসজিদ ভ্রমণ।