ইস্তাম্বুলের ইউরোপিয়ান অংশে অবস্থিত তাকসিম স্কয়ার একটি ঐতিহাসিক ময়দান। তুরস্কে আগত পর্যটকদের একটি অন্যতম গন্তব্য। তাকসিম স্কয়ারে রয়েছে অনেক দোকান পাট, রেস্টুরেন্ট-ক্লাব। এছাড়া তাকসিমে অনেক অভিজাত হোটেল রয়েছে। তাকসিমের মাঝখানে রয়েছে রিপাবলিক মনুমেন্ট। তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়কদের ভাস্কর্য এটি। এক পাশে রয়েছে আতাতুর্ক কালচারাল সেন্টার। আরেকদিকে একটি প্রাচীণ গীর্জা। তবে তাকসিমের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর স্থাপনা তাকসিম মসজিদ।
ওসমানী আমলে তাকসিম ছিলো একটি সেনানিবাস। তুর্কিস ভাষায় বলা হতো তাকসিম খিসলা। খিসলার ভেতরে একটি মসজিদ ছিল। ১৯০৯ সালে সুলতান আবদুল হামিদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যে সেনাবিদ্রোহ হয়, তাতে সেনানিবাসটির অনেক ক্ষতি হয়। পরে আধুনিক তুরস্কে সেনানিবাসটির ভেতরে তুরস্কের প্রথম স্টেডিয়াম নির্মান করা হয়।
১৯২৩ সালে তাকসিমে প্রথম রিপাবলিক মনুমেন্ট নামে ভাষ্কর্য নির্মান করা হয়। তাকসিমের ইসলামিক পরিচয় মুছে ফেলতে ১৯৪০ সালে তাকসিম সেনানিবাস ও মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। সেখানে একটি পার্ক বানানো হয়। গেজি পার্ক। তুরস্কের সেক্যুলার দলগুলো এখানে মিছিল মিটিং করতে পছন্দ করতো।
২০১১ সালে তাকসিমে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান। এতে প্রবল বাধ সাধে সেকুল্যার সমাজ। তাকসিম পার্ক রক্ষার নামের সেই প্রতিবাদ পরে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে রুপ নেয়। যা গেজী পার্ক প্রটেষ্ট নামে পরিচিত। তবে সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রসিডেন্ট হয়ে এরদোয়ান তাকসিম আধুনিক স্থাপত্যের প্রকাণ্ড এক মসজিদ নির্মান করেন। তাকসিম পায় তার হারানো ইসলামিক পরিচয়। তবে এরদোয়ান তাকসিমের পুরোনো আতাতুর্ক কালচারাল সেন্টার ভেঙ্গে নতুন করে বিশাল একট কালচারার সেন্টারও করে দেন। এভাবে তাকসিমের এক প্রান্তে মসজিদ, আরেক প্রান্তে গীর্জা ও অপর দিকে কালচারাল সেন্টার। সব মিলিয়ে তাকসিম একটি বহু সংস্কৃতির মিলনস্থল।
তাকসিমের পাশে রয়েছে বিখ্যাত ইস্তেকলাল জাদ্দে। শতবছর ধরে এটি ইস্তাম্বুলের একটি অভিজাত সড়ক। এই সড়কের দুই পাশে রয়েছে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্র্যান্ডের দোকান। হোটেল, রেস্টুরেন্ট। তুরস্কের সবচেয়ে প্রাচীণ ট্রাম চলে এই ইস্কেকলাল জাদ্দে দিয়ে। বাস কিংবা মেট্রোতে সহজেই যাওয়া যায় তাকসিমে।