এফেসাস: হাজার বছরের সভ্যতার দীর্ঘশ্বাস

এফেসাস
July 5, 2024

তুরস্কের ইজমির প্রদেশের একটি প্রাচীন শহর এফেসাস। কয়েক হাজার বছরের যাত্রা শেষে শহরটি আজও ঘুমিয়ে আছে। ভগ্ন ভবনগুলো আজও সাক্ষ্য দিচ্ছে যে একদিন এখানে জীবনের প্রাণচাঞ্চল্য ছিলো। হাজার বছরের পুরোনো ভবনের উঁচু উঁচু পিলারগুলো প্রাচীন পৃথিবীর মানুষের মেধার পরিচয় জানান দিচ্ছে।  

 

এফেসাস মূলতঃ তৈরী হয় গ্রীকদের হাতে খ্রিষ্টপূর্ব ১০ম শতাব্দিতে। পরবর্তীতে খ্রিষ্টপূর্ব ১২৯ সালে এটির দখল নেয় রোমান সাম্রাজ্য। রোমানরা শহরটির ব্যাপক উন্নয়ন করে। এটি খ্রিষ্টান ধর্মের অন্যতম এক শহরে মর্যাদা পায়। তবে ২৬৩ সালে জার্মান গোথ জাতির আক্রমণের শিকার হয়ে শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে কয়েকবার এটিকে সংস্কার করা হলেও আগের মতো এটি আর প্রাণ ফিরে পায় নি। পরে একটি ভূমিকম্পে শহরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।

 

এই শহরে প্রাচীন পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম টেম্পল অব আর্টেমিশ অবস্থিত। এই শহরের অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভবনের মধ্যে সবচেয়ে দর্শনীয় হল লাইব্রেরী অব সেলসাসের সামনের অংশ। এছাড়া এখানে এমন একটি থিয়েটার পাওয়া গেছে যাতে সেসময় একসাথে ২৪ হাজার দর্শক নাটক দেখতে পারত।

 

 লাইব্রেরী অব সেলসাস নির্মিত হয় ১২৫ খ্রীস্টাব্দে রোমান গর্ভণর সেলসাসের ব্যক্তিগত অর্থায়নে। তৎকালীন সময়ে এই লাইব্রেরীতে ১২ হাজার বই ছিলো। লাইব্রেরীটির সামনের দিকটি পূর্ব দিকে মুখ করা। যাতে করে সূর্যের আলোতে পড়াশুনা করা যায়। ২৬২ সালে লাইব্রেরীটি ধ্বংস হয়ে গেলে এর ভগ্নাংশগুলো পড়ে থাকে। হাজার বছর পর ১৯৭৮ সালে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে লাইব্রেরীর ভাঙ্গা অংশগুলো জোড়া দিয়ে এর সামনের দিকটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। ফলে লাইব্রেরীটির মূল অবয়ব কেমন ছিলো তা পর্যটকদের সামনে ফুটে ওঠে।

 

হাউজ অব ভার্জিন ম্যারি 

ইজমিরের এফেসাস শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হযরত মরিয়ম (আ) এর বাড়ি। এটি খ্রিস্টানদের কাছে হাউজ অব ভার্জিন ম্যারি নামে পরিচিত। খ্রিস্টানদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। 

 

১৮৮১ সালে হযরত মরিয়ম (আ) বাড়িটির সন্ধান পাওয়া যায়। এতো বছর পর কিভাবে এই বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেল তা নিয়ে একটি গল্প আছে। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের একজন রহস্যময়ী নান ছিলো আন্নে ক্যাথরিন অ্যামেরিচ। তিনি দাবী করেন সাধনার মাধ্যমে তিনি দিব্য দৃষ্টি লাভ করেছেন। সেই দৃষ্টি দিয়ে তিনি যিশু খ্রিস্ট ও মরিয়মের শেষ দিনগুলোর বিস্তারিত বিবরণ বর্ণনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বর্ণনার উপর ভিত্তি করে ক্লেমন বেনটানো নামে একজন একটি বই লিখেন। 

 

এই বইয়ের বর্ণনা অনুসারে অ্যাবে জুলিয়ান গুয়েত নামের ফরাসী ধর্মযাজক আসেন অটোমান সাম্রাজ্যের ইজমির শহরে। তিনি একটি পাহাড়ের উপর এফেসাস ও এজিয়ান সাগরের দিকে মুখ করা একটি পাথরের ঘর খুঁজে পান। ঘরটি জেরুজালেমে যাওয়া পথের পাশে অবস্থিত। তিনি বিশ্বাস করেন এটিই হলো নান ক্যাথরিনের বলে যাওয়া বাড়িটি। 

 

যদিও ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে এটির পক্ষে বা বিপক্ষে কিছুই বলা হয় নি। তবুও প্রতিবছর ক্রমেই বাড়ছে খ্রিস্টান দর্শনার্থীদের ঢল। এমনি পোপ জন পল ও পোপ বেনেডিক্ট্ সফর করে গেছেন হযরত মরিয়মের বাড়ি। ধারণা করা হয় মরিয়ম তাঁর শেষ জীবন এখানে কাটিয়েছেন। প্রতিবছর আগষ্টের ১৫ তারিখ খ্রিষ্টানরা এখানে জিয়ারতে আসে।