আনাতোলিয়ার গহীনে: চলুন ঘুরে আসি

আনাতোলিয়ার গহীনে
July 5, 2024

এমন মুহুর্তে যদি পাশে থাকে প্রিয়জন, তাহলে মুহুর্তগুলোর আনন্দ শেয়ার করে তা বাড়িয়ে নেয়া যায় বহুগুণ। এমনই একটি ট্রেন ভ্রমণের গল্প বলবো আজকে।

 

তুরস্কের মূল ভূখণ্ডকে বলা হয় আনাতোলিয়া। তুরস্কে ঘুরতে আসা পর্যটকরা মূলতঃ ইস্তাম্বুল, ইজমির কিংবা আংকারার মতো বড় শহরগুলোতে ২/৩ দিন ঘুরে তুর্কি সংস্কৃতির স্বাদ নিতে চায়।

 

কিন্তু তুরস্কের সত্যিকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে শহরের বাইরে। আংকারা ছাড়িয়ে। আনাতোলিয়ার গহীনে।

 

অনেক বড় দেশ তুরস্ক। এক যাত্রায় ঘুরে দেখা অসম্ভব। তবে তুরস্ক ঘুরে দেখার একটি চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি করেছে ইস্টার্ন এক্সপ্রেস ট্রেন।

 

রাজধানী আংকারা থেকে দীর্ঘ ১৩১০ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে এই ট্রেন আপনাকে নিয়ে যাবে তুরস্কের পূর্বদিকে অবস্থিত সীমান্তবর্তী শহর কারস। ৭ টি প্রদেশের বুক চিরে ট্রেনটির কারসে পৌছাতে সময় লাগে ৩২ ঘন্টা। এক লম্বা জার্নি। পরিবার নিয়ে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে চমৎকার কিছু সময় কাটানোর জন্য  উপযুক্ত। ট্রেনটি তুরস্কের পূর্বাঞ্চলে যাওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে দোউ এক্সপ্রেস বা ওয়েস্টার্ন এক্সপ্রেস।

 

তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন এটি। এই ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য অনেক আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে হয়। কারণ এই এক ট্রেন ভ্রমণে তুরস্কের বড় একটি অংশ দেখার সুযোগ রয়েছে। আংকারা মালভূমি থেকে কত শত শহর, নগর, গ্রাম, পেরিয়ে, কত পাহাড়ের ভেতর দিয়ে টানেল মাড়িয়ে ট্রেন ছুটে চলে। সমতল থেকে মালভূমি, নদীর তীর থেকে পাহাড়ী উপত্যকা। তুরস্কের প্রায় সব ধরনের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার অতুলনীয় এক সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই ট্রেন।

 

রাতের ট্রেন জার্নি ভিন্ন ধরনের এক মায়াবী সৌন্দর্য জড়ানো। নিঝুম রাতে ঝিক ঝিক আওয়াজ তুলে ছুটে চলেছে ট্রেনটি। জানালায় দেখা যাচ্ছে পূর্ণিমার চাঁদ। অথবা আকাশে জ্বলজ্বলে তারার মেলা। গল্প করার জন্য চমৎকার এক সময়।

 

ইস্টার্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতর রয়েছে সাধারণ চেয়ার অথবা ব্যক্তিগত কামরা। কামরার ভেতর হিটার ও এসি সুবিধা রয়েছে। চেয়ারগুলো এমন ভাবে তৈরী যে চাইলে চেয়ারে বসা যায়। আবার চেয়ার টান দিলে খাট হয়ে যায়। এছাড়া একটি বগি বরাদ্দ শুধু রেস্টুরেন্টের জন্য। শীতের দিনে গরম গরম তুর্কি স্যুপের স্বাদ কিংবা তুর্কিশ চায়ের অর্ডার দিয়ে দেখতে পারেন তুরস্কের প্রাকৃতিক দৃশ্য।

 

কিভাবে শুরু:                                                                                                                                  

১৯৩৬ সালে ইস্টার্ণ এক্সপ্রেস প্রথম যাত্রা শুরু করে। তখন ইস্তাম্বুল থেকে ট্রেন ছাড়তে। চলে যেত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্তে থাকা কারসে। পরে ইস্তাম্বুল-আংকারা রুটে হাইস্পিড ট্রেন চালু হওয়ায় এখন ট্রেনটি আংকারা থেকে যাত্রা শুরু করে।

 

ইস্টার্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৫০ টির বেশী স্টেশনের থামে। তবে ছোট শহরে অল্প কয়েক মিনিটের জন্য। এরজুরুমের মতো বড় শহরে ২/৩ ঘন্টার মতো বিরতিও নেয়। ফলে সেই সুযোগে ঘুরে আসতে পারেন সেই শহরটিও।

 

রাশিয়ার ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলের মতো ইস্টার্ণ এক্সপ্রেস আপনাকে দিবে পুরো তুরস্ক ঘুরে দেখার মতো অপূর্ব অনুভূতি। তবে আর দেরী কেন? প্রিয়জনকে নিয়ে পরিকল্পনা করে ফেলুন চমৎকার একটি ট্রেন ভ্রমণের। আপনাদের ভ্রমণকে সহজ ও আরামদায়ক করতে পাশে আছে অটোমান ট্যুরিজম।